ধান আসাদন বা সংগ্রহ বিষয়ে কিছু প্রশ্নাবলী
১) পশ্চিমবঙ্গ সরকার কি এই বছর ধান কেনার কোন পরিকল্পনা করেছেন?
হ্যাঁ। প্রত্যেক বছরের ন্যায় এবছরও পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১ লা নভেম্বর ২০২৩ থেকে খরিফ মরশুম ২০২৩-২৪ কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার ব্যবস্থা করেছেন।
২) কোথায় এবং কখন ধান কেনা হচ্ছে?
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তর সারা রাজ্যে কেন্দ্রীয় ধান্য ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করেছেন প্রায় সমস্ত ব্লকের কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে। এই ধান্য ক্রয় কেন্দ্রগুলি সাধারণত ব্লকের কৃষক বাজারগুলোতে এবং অন্যান্য কিছু বিশেষ জায়গাতে খোলা হয়েছে। এগুলি স্থায়ী কেন্দ্র । এই কেন্দ্রগুলোতে সরকারী ছুটির দিন বাদে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত প্রত্যেকদিন ধান কেনা চলছে সারা বছর ধরেই।
এছাড়াও, দূরবর্তী অঞ্চলে কৃষকদের সুবিধার্থে, মোবাইল CPCs (mCPC) পরিচালিত হয়। একটি mCPC পূর্ব ঘোষণার সাথে একটি পূর্ব-নির্ধারিত দিন/সময়ের জন্য একটি সুস্পষ্ট স্থানে অনুষ্ঠিত হয় যাতে সেই এলাকার সমস্ত ইচ্ছুক কৃষক উপস্থিত হতে পারে।
৩) স্থায়ী ক্রয় কেন্দ্র ছাড়া অন্য কোথাও কি ধান কেনা হয়? এই বিষয়ে কীভাবে জানা যাবে?
হ্যাঁ। প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতি / স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্ঘ বা মহাসঙ্ঘ/ কৃষি উৎপাদক সংস্থা (FPO) বা কৃষি উৎপাদক কোম্পানিগুলি (FPC) সরকারের তরফে সি এম আর (CMR) এজেন্সির (যেমন ই সি এস সি, বেনফেড, নাফেড, কনফেড, এন সি সি এফ, পি বি এম সি এল ইত্যাদি) অধীনে ধান কেনার শিবির করে থাকে। স্থায়ী ধান্য ক্রয় কেন্দ্র থেকে দূরবর্তী স্থানে প্রয়োজন সাপেক্ষে এই ধান কেনার শিবিরগুলি করা হয়। এগুলি অস্থায়ী ।
https://epaddy.wb.gov.in/CMR/CMRscheduleList.aspx এই লিঙ্ক থেকে শিবিরের তারিখ ও স্থান জানা যায়। কোথায় কখন শিবির হবে সে বিষয়ে সাধারণত অগ্রিম প্রচার করা হয়। এছাড়া সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের করণ ও স্থানীয় ব্লক/মহকুমা/জেলা খাদ্য দপ্তর থেকে এ বিষয়ে খবর পাওয়া যায়।
৪) এ বছর ধানের সহায়ক মূল্য কত নির্ধারিত হয়েছে?
এ বছর ধানের সহায়ক মূল্য কুইন্টাল প্রতি ২১৮৩/- টাকা নির্ধারিত হয়েছে। এ ছাড়া, শুধু মাত্র কেন্দ্রীয় ধান্য ক্রয় কেন্দ্র ও মোবাইল CPC-তে ধান বিক্রি করলে কুইন্টাল প্রতি ২০ টাকা বোনাস দেওয়া হয়।
৫) কারা সরকারি স্থায়ী বা অস্থায়ী ধান ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে পারবেন?
https://epaddy.wb.gov.in/ ওয়েবসাইট-এ নথিভুক্ত কৃষকই শুধুমাত্র সরকারি স্থায়ী বা অস্থায়ী ধান ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে পারবেন। কৃষক নিজেই ওই ওয়েবসাইট-এর 'Farmer Self-Registration' (https://epaddy.wb.gov.in/Registration/SpotRegistration_Self.aspx) মেনুতে গিয়ে পরপর তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। চাইলে কৃষক তাঁর মোবাইল থেকেই কাজটি করতে পারেন।
তথ্য দেওয়ার পর ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, জমির কাগজ আর ব্যাঙ্ক-এর পাসবইয়ের প্রথম পাতা upload করতে হবে ।
অ-নথিভুক্ত বর্গাদার হলে জমির কাগজের বদলে স্ব-ঘোষণাপত্র দিতে হবে যার বয়ান ওই ফর্ম-এর মধ্যেই দেওয়া আছে।
৬) কৃষকের যদি পূর্ববর্তী বছরে নিবন্ধন বা registration করা থাকে তাহলে কি আবার রেজিস্ট্রেশন করতে হবে?
এই ক্ষেত্রে প্রথমে ইতিমধ্যেই থাকা রেজিস্ট্রেশন-টির status বা বর্তমান স্থিতি দেখে নেওয়া দরকার। এই কাজটিও কৃষক নিজেই https://epaddy.wb.gov.in/ ওয়েবসাইট-এর Farmer মেনুর মধ্যে 'Farmer registration Status' সাব-মেনুর মধ্যে ঢুকে করতে পারেন (https://epaddy.wb.gov.in/FarmerApplicationandUpdateStatus.aspx )।
রেজিস্ট্রেশন নম্বর বা আধার নম্বর দিয়ে সার্চ করে তাঁর রেজিস্ট্রেশন ‘Active’ দেখালে আর কিছু করতে হবে না।
আর যদি Status 'Inactive' দেখায় তাহলে কোন কারণে 'Inactive' তাও লেখা থাকবে। তার পাশেই Update button দেখা যাবে। ওখানে ঢুকে যে যে কারণে রেজিস্ট্রেশন-টি 'Inactive' আছে, সেই ক্ষেত্রগুলি update করে দিতে হবে। কোন ক্ষেত্রে কি update করতে হবে তা নিচে দেওয়া হলো:
* কৃষক বন্ধু প্রমানীকরণ না থাকলে: ভোটার কার্ড বা কৃষক বন্ধু ID
* আধার প্রমানীকরণ না থাকলে: আধার নম্বর দিয়ে আধার-সংযুক্ত মোবাইল নম্বর-এ OTP -র মাধ্যমে আধার প্রমাণীকরণ
* ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট প্রমানীকরণ না থাকলে: ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-এর তথ্য দিয়ে পাসবইয়ের কপি আপলোড করতে হবে।
যদি ঐ কৃষকের কৃষক বন্ধুতে নাম না থাকে, অর্থাৎ অ-নথিভুক্ত বর্গাদার হলে জমির তথ্য দিয়ে স্ব-ঘোষণাপত্র upload করতে হবে। চাইলে পুরো কাজটা মোবাইল থেকেই করা যেতে পারে।
৭) নতুন রেজিস্ট্রেশন বা আপডেট করার সঙ্গে সঙ্গেই কি কৃষক ধান বিক্রি করতে পারবেন?
না। রেজিস্ট্রেশন ও আপডেট-এর আবেদন জমা হওয়ার পর কৃষকের দেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-এর তথ্য ব্যাঙ্ক থেকে যাচাই করে নেওয়া হয়। ব্যাঙ্ক থেকে অনুমোদন পাওয়া গেলে কৃষকের রেজিস্ট্রেশন 'Active' হয়ে যায়। এতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
ব্যাঙ্ক থেকে অনুমোদন না হয়ে ফেরত আসা রেজিস্ট্রেশন কৃষক আবার দেখতে ও আপডেট করতে পারেন।
৮) ধান বিক্রি করতে কি কি কাগজ পত্র দরকার?
ধান বিক্রি করার জন্য কৃষককে প্রথমে 'Farmer Self - Schedule' মেনু থেকে তাঁর জেলার মধ্যে একটি ধান ক্রয় কেন্দ্র বেছে নিতে হবে ও ধান বিক্রির জন্যে একটি দিন স্থির করতে হবে। সাধারণত একটি ধান ক্রয় কেন্দ্রে একদিনে ৬০ জন কৃষকের থেকে ধান ক্রয় করা হয় ।
কৃষক কেন্দ্র ও দিন স্থির করে নিলে তাঁকে ওয়েবসাইট থেকে একটি রসিদ দেওয়া হয় । ধান বিক্রির জন্যে নির্দিষ্ট দিনে ওই রসিদ এবং আধার-সংযুক্ত মোবাইল নিয়ে কৃষককে ধানসহ ক্রয় কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে । তবে এইদিন জমা দেওয়া ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, জমির কাগজ (অনথিভুক্ত বর্গাদারের জন্য নয়) ও ব্যাঙ্ক-এর পাসবই-এর আসল সঙ্গে রাখা ভালো।
৯) জরুরী ভিত্তিতে অন্যান্যদের থেকে আগে কি ধান বিক্রি করা যাবে?
হ্যাঁ। কোন জরুরী কারণে আগে ধান বিক্রি করতে হলে সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের /মহকুমা শাসক/ অতিরিক্ত জেলা শাসক/ জেলা শাসক/ সভাপতি/ কর্মাধ্যক্ষ/ সভাধিপতি/ বিধায়ক/ সাংসদের শংসাপত্র নিয়ে ধান্য ক্রয় কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে। এ ছাড়াও ধান ক্রয় কেন্দ্রের ক্রয় আধিকারিক এই সমস্ত জরুরী কারণ, যেমন (ক) শিশুদের পড়াশুনা, (খ) বিবাহ, (গ) জরুরী চিকিৎসা ইত্যাদির ভিত্তিতে আগে ধান বিক্রির সুযোগ দিতে পারেন।
১০) জরুরী ভিত্তিতে অন্যান্যদের থেকে আগে কি ধান বিক্রি করা যাবে?
হ্যাঁ। কোন জরুরী কারণে আগে ধান বিক্রি করতে হলে সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের /মহকুমা শাসক/ অতিরিক্ত জেলা শাসক/ জেলা শাসক/ সভাপতি/ কর্মাধ্যক্ষ/ সভাধিপতি/ বিধায়ক/ সাংসদের শংসাপত্র নিয়ে ধান্য ক্রয় কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে। ধান ক্রয় কেন্দ্রের ক্রয় আধিকারিক এ ছাড়াও এই সমস্ত জরুরী কারন, যেমন (ক) শিশুদের পড়াশুনা, (খ) বিবাহ, (গ) জরুরী চিকিৎসা ইত্যাদি।
১১) ধান বিক্রির দিন কি কৃষককে নিজে ধান ক্রয় কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতেই হবে?
হ্যাঁ, ধান বিক্রির সময়ে কৃষকের শনাক্তকরণ আধার প্রমাণীকরণের (আঙুলের ছাপ স্ক্যান/চোখের মণি স্ক্যান/ওটিপি থেকে আধার-সংযুক্ত মোবাইল নম্বর)মাধ্যমে বাধ্যতামূলক। এই কাজটি ePoP যন্ত্রের মাধ্যমে করা হবে।
১২) একজন কৃষক কতটা ধান বিক্রি করতে পারবেন?
একজন কৃষক সম্পূর্ণ KMS ২০২৩-২৪-এর জন্য সর্বাধিক ৯০ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে পারে। তবে, ধানের পরিমাণ প্রতিটি কৃষকের জমির আকার এবং কৃষি দপ্তর নির্ধারিত ব্লক-পিছু উৎপাদনশীলতার উপর নির্ভর করে গণনা করা ধানের পরিমাণের সীমা সাপেক্ষে হবে।
১৩) ধানের কি কোন মান নির্ধারিত আছে?
হ্যাঁ। ধানের নির্দিষ্ট মান নির্ধারিত আছে যা না মিললে সেই ধান কেনা হবে না। মানটি নিম্নে বর্ণিত হলঃ
ধান পরিষ্কার, শুকনো, পরিপক্ক, সঠিক গুণমান, পুষ্ট দানাসম্পন্ন ও একই ধরনের আকার বা রং-এর হওয়া দরকার। ধানে যেন কোন রকমের ছত্রাক, পোকার সংক্রমণ না হয়ে থাকে তা দেখা দরকার। সরকার মূলত মোটা ধানই ক্রয় করেন। অন্যান্য নির্দিষ্ট গুণমানগুলি নিম্নে দেওয়া হলঃ
প্রতিসরণগুলির সর্বাধিক মাত্রা ১) জৈব মিশ্রণ / অজৈব মিশ্রণ ১% ২) নষ্ট, বিবর্ণ, অঙ্কুরিত, পোকায় কাটা ধান ৫% ৩) অপরিপক্ক, কুঞ্চিত ধান ৩% ৪) নিম্ন জাতের মিশ্রিত ধান ৬% ৫) আর্দ্রতা ১৭% এই গুণমান পরীক্ষার জন্য প্রতিটি ধান ক্রয় কেন্দ্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকে।
১৪) ধান বিক্রির সময় কোন পরিমাণ বাদ দেওয়ার কি কোন নিয়ম আছে?
সাধারণত ধান যদি সঠিক গুণমান অনুযায়ী না হয় তবে সেই ধান কেনার কথা নয়। কিন্তু কৃষক ভাইদের ধান আনা-নেওয়ার কষ্টের কথা চিন্তা করে, সেই ক্ষেত্রে কিছু পরিমাণ বাদ দিয়ে সেই ধান কেনা হয়। তবে সেটা অবশ্যই কৃষক ভাইদের সামনে ধান পরীক্ষা এবং আলোচনা সাপেক্ষ। যদি কৃষক তাঁর ধান পরিস্কার করে মান অনুযায়ী না আনেন তবে এই সমস্যা আসতে পারে।
১৫) ভেজা ধান নেওয়ার ক্ষেত্রে কি কোন বিধিনিষেধ আছে?
হ্যাঁ। ধানের সর্বাধিক আর্দ্রতার মাত্রা হল ১৭%। এর বেশী আর্দ্রতা থাকলে ধান সাধারণত বাতিল করা হয়।
১৬) ধান বিক্রির সময় ধানের মান নিয়ে কোন সমস্যা দেখা দিলে কি করণীয়?
তিনজন ব্যক্তি যথা- সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের প্রতিনিধি, কৃষি দপ্তরের প্রতিনিধি এবং চাল কলের প্রতিনিধিদের নিয়ে ব্লকস্তরে একটি কমিটি গঠন করা থাকে। ধানের মান নিয়ে কোন সমস্যা দেখা দিলে এই কমিটি সেই বিষয়টির বন্ধুত্বপূর্ণ মীমাংসা করেন।
১৭) ধান বিক্রি করতে অসুবিধে হলে কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে?
সেক্ষেত্রে জেলা বা মহকুমা নিয়ামকের, বা সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের করণে যোগাযোগ করা যেতে পারে অথবা খাদ্য দপ্তরের টোল ফ্রি ফোন নং ১৮০০-৩৪৫-৫৫০৫ / ১৯৬৭ তে যোগাযোগ করে সমস্যা জানানো যেতে পারে।
১৮) ধানের বস্তা কি কৃষকেরা ফেরত পাবেন?
হ্যাঁ, ধান বিক্রির পর ধানের বস্তা কৃষকেরা ফেরত পাবেন।
১৯) ধান্য ক্রয় কেন্দ্রে একদিনে মোট কত ধান কেনা হবে?
সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন পরিমাণ বেঁধে দেওয়া নেই। তবে একদিনে ৬০ জন কৃষকের থেকে ধান নেওয়া হবে।
২০) ধানের দাম কীভাবে পাওয়া যাবে?
ধান বিক্রির ৩ দিনের মধ্যে ধানের দাম সরাসরি কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট-এ দেওয়া হবে । ব্যাংক অ্যাকাউন্ট-এর বিবরণ সঠিক ভাবে না দেওয়া থাকলে দেরী হতে পারে।
২১) জনধন অ্যাকাউন্ট-এ ধানের দাম পেতে কি কোন অসুবিধে হবে?
হ্যাঁ, অসুবিধে হবে। জনধন অ্যাকাউন্ট-এ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকাই জমা হয়। ধানের দাম যদি সেই ঊর্ধ্বসীমার বেশী হয় তবে তা সেই অ্যাকাউন্ট-এ জমা হবে না। এই সমস্যা সুপ্ত বা নন-কেওয়াইসি ( নো ইয়োর কাস্টমার) অ্যাকাউন্ট-এর ক্ষেত্রেও হতে পারে।
২২) ধানের দাম পেতে কোন অসুবিধে হলে কি করতে হবে?
সেক্ষেত্রে ধান্য ক্রয় কেন্দ্রের ক্রয় আধিকারিক (PO) ও বিতরণ আধিকারিক (DO)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কোন সমস্যা থাকলে শীঘ্র তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।